শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কিংস পার্টি। রাজনীতি পাড়ায় এখন সরগরম কী-ওয়ার্ড কিংস পার্টি। কেউ পক্ষে কেউবা বিপক্ষে কথা তুলছে কিংস পার্টির।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিংস পার্টি কী? কেন’ই বা কিংস পার্টির উত্থান ঘটে?
কিংস পার্টি ধারনাটি মূলত পশ্চিমাদের থেকে ধার করা। কিংস পার্টির মাঠ পর্যায়ের সংজ্ঞা দিতে গেলে বলতে হয় ” নানাবিধ কারনে ( সেনা বিদ্রোহ,বিক্ষোভ, জরুরী অবস্থা) যখন সামরিক শক্তি ক্ষমতায় আসে এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের ছত্রছায়ায় নব্য রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয় তখন সেই দলগুলিকে কিংস পার্টি বলা হয়।”
কিংস পার্টির ধারনা বাংলাদেশে অনেক পুরোনো। সেই ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন এর সময় প্রথম বাংলাদেশে কিংস পার্টির আবির্ভাব ঘটে। সাত সালে সেনাসমর্থিত সরকার ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন এর হাত ধরেই কিংস পার্টি গড়ে ওঠে। ক্ষমতার স্বাদ নিতে রাতারাতি গঠন করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কিছু রাজনৈতিক দল। এক-এগারোর সময় যাত্রা শুরু করা এই ছোটখাটো দলগুলো পরিচিতি পায় ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে।ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেসব দলের সমন্বয়ে কিংস পার্টি গড়ে ওঠে সেগুলো হলো- প্রায়ত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহম্মদের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, শওকত হোসেন নীলুর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কল্যাণ পার্টি। এছাড়াও জাগপার প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে কিংস পার্টি বেশ পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ নামের নিবন্ধিত একটি দল নিয়ে তৎপরতা চলে। একপর্যায়ে দলটির প্রধানকে টেলিভিশন মার্কা প্রতীকে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য বানানো হয়।
আরও পড়ুন ওয়ান ইলেভেন ও বাংলাদেশের রাজনীতি
এই আলোচনায় যাবার আগে আমাদের কিংস পার্টির সংজ্ঞায় আবার ফিরে যেতে হবে। কিংস পার্টির কাজ মূলত সরকারের বৈধতা দেয়া ও নিজেরা কিছুটা সুবিধা ভোগ করা।
এখন আসি বর্তমান প্রেক্ষিতে, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ‘২৩ সাল জুড়েই চলছে সাজসাজ রবরব প্রস্তুতি। বিএনপি সারাবছর নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলন সমাবেশ মিছিল মিটিং চালিয়েছে। এদিকে আওয়ামীলীগে চলেছে নিজস্ব সরকার ব্যবস্থার অধীনে ভোট কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি।
এরই মধ্যে এবছর জুন মাসে বিএনপির সাবেক সাংসদ অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে নিবন্ধন দাবী করে বসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে একটি রাজনৈতিক দল।এরই মধ্যে নিবন্ধন পেয়েও যায় দলটি।এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ঘোষনা করেছেন তারা। বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্জাহান বলেছেন,
“বিভিন্ন আসন থেকে ৪৭৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তির মধ্যে ৮২ জনকে চূড়ান্ত করেছি। আমরা কোয়ান্টিটিতে নয়, কোয়ালিটিতে বিশ্বাসী। যাঁরা বিজয়ী হওয়ার মতো, তাঁদের তালিকায় রাখা হয়েছে।”
এদিকে বিএনপি এর দলছুট নেতা তৈমুর আলম খোন্দকার ঘোষনা করেন তার দল তৃনমুল বিএনপি নির্বাচনে যাবে। অন্তত দুইশত আসনে সতন্ত্র প্রার্থী দেবার ঘোষণা করেছে তৃনমুল বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে,তৃনমুল বিএনপি এবং বিএনএম আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টি হয়ে খেলছে।এরই সাথে নতুন করে কিংস পার্টির খাতায় নাম লিখিয়েছেন মেজর মুহাম্মদ ইবরাহিম। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান।
এইযে পার্টিগুলি ,এখান থেকে সরকারের লাভ হলো তাদের নির্বাচন বৈধতা পাবে, কিংস পার্টির লাভ হলো তারা মাঝখান দিয়ে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া কিছু আসন ভোগ করবে।(যদিও শেষ সময়ে এসে কিংস পার্টির কেউই সুবিধা করে উঠতে পারেনি খুব একটা।)
এক-এগারোতে গড়ে ওঠা দাপুটে কিংস পার্টিগুলোর কোন খোজ আর এখন নেই। দলগুলোর নেতাকর্মীরা কে কোথায় আছে তার হদিস মেলা দায়। উচ্ছিষ্ট ক্ষমতার স্বাদ নিতে নানাবিধ দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কিংস পার্টি বর্তমানে লাপাত্তা। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাসীন শক্তির ওপর ভর করে কিছুটা ক্ষমতার স্বাদ নেবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরই রাজনীতি পাড়ার হাওয়া আর তাদের গায়ে লাগেনি। কিংস পার্টির শেষ পরিনতি রাজনৈতিক আর্কাইভের আস্তাকুঁড়ে। কিংস পার্টিকে অনেকে ভালোবেসে(!) মীরজাফর পার্টি বলেও ডাকে যা সামান্যও অত্যুক্তি নয়।
প্রতিটি বাঙালির জন্যই দেশকে ,ভাষাকে জানা আবশ্যকীয়। এরই সাথে সাথে সমসাময়িক বিশ্ব সম্পর্কেও চাই সম্যক জ্ঞান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক খুঁটিনাটি আলোচনা জানতে পড়ুন চর্যাপদ ।
আমাদের গবেষনাধর্মী লেখাগুলি পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন